
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ অনেকেরই পড়া। যাদের পড়া নেই তাদের যদি গল্পটা এখানেই বলে ফেলি তবে নাটক দেখার আনন্দ মাটি করব। কিন্তু যে দর্শক টিকিট কাটবেন তাঁর তো জানা দরকার পয়সা খরচ করে টিকিট কেটে তিনি আদতে দেখবেন কী? দেখবেন উপন্যাসের মঞ্চরূপ। শরদিন্দুর অনবদ্য এই সিনেমাটিক উপন্যাসে আমরা মঞ্চের ম্যাজিক প্রয়োগ করেছি। কিন্তু সে তো যে কোনো গল্পকে মঞ্চে আনতে গেলে করতে হবে, এ তো নতুন নয়। নতুন হল এই প্রযোজনার বেশ কিছু স্তর আছে। প্রথমত, এই প্রযোজনাটি হাতে আঁকা স্কেচ, উপন্যাসের নাট্যরূপ এবং গানের মেলবন্ধন। সেই সঙ্গে প্রযোজনাটি উপন্যাস থেকে একপা না সরে শরদিন্দুর না বলা কথা গুলি দর্শকের চোখে চোখ রেখে বলে। দ্বিতীয়ত, এই নাট্য যেমন সাহিত্য বিশ্লেষকদের খোরাক হতে পারে তেমনই নাট্যরসিকদেরও মনোরঞ্জন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তৃতীয়ত, বিদেশী সাহিত্যে ঐতিহাসিক রূপকথার গল্প আমরা হামেশাই পাই, কিন্তু আমাদের নিজেদের খুব বেশি একটা পুঁজি নেই। বাংলা ভাষায় তো খুবই কম। সেদিক থেকে দেখলে এই নাট্য আমার দেশের সাহিত্যকে চেনায়। এই সব দিকগুলি এই নাট্য মঞ্চস্থ করার জন্য আমাদের আগ্রহী করে তোলে। আপনারা নান্দনিকের ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ নাটকটি দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত থাকলে আমরা খুবই উৎসাহ পাব। আপনাদেরও এই নাটক বিশেষ ভালো লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এর পরেও যদি সারসংক্ষেপ জানতে চান, তবে – বিজয়নগরের রাজা দেবরায়, কলিঙ্গরাজ গজপতি ভানুদেবকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন। সন্ধিতে স্থির হয় কলিঙ্গের প্রধানা রাজকন্যা বিদ্যুন্মালার সঙ্গে দেবরায়ের বিবাহ হবে। কিন্তু এই রাজনৈতিক চুক্তিতে বিদ্যুন্মালার মত নেই, কিন্তু তিনি বাধ্য। বোন মণিকঙ্কনা আর মনে বিষাদ, এই দুই নিয়ে তাঁকে যাত্রা করতে হয় বিজয়নগরের উদ্দেশ্যে। যাত্রাপথে তাঁরা জল থেকে উদ্ধার করেন একটি ঘরছাড়া মানুষকে। তার নাম অর্জুনবর্মা। বিজয়নগর পৌঁছনোর সময় হঠাৎ ঝড় আসে, রাজকুমারী জলে পড়ে যান। তাঁকে উদ্ধার করে এই অর্জুনবর্মা। বিজয়নগর পৌঁছে প্রথমেই রাজকুমারীকে দেবরায়ের বিশ্বস্ত ভ্রাতা কম্পনদেবের কু-নজরে পড়তে হয়। কম্পনদেব শুধুমাত্র রাজকুমারীকেই চায় তা নয়, চায় সিংহাসন, চায় রাজরক্ত। সেই উদ্দেশ্যে কম্পনদেব নিজের ভাইকে হত্যা করতে আসে। এই সময় অর্জুনবর্মা কম্পনকে হত্যা করে রাজা দেবরায়কে বাঁচায়। ভাইয়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ভেঙে যায়, সেই বিশ্বাসের ঘরে জায়গা পায় অর্জুনবর্মা। কিন্তু ওদিকে রাজকুমারী ভালোবেসেছেন এই ঘরছাড়া মানুষটিকে। সেই মানুষটি ভালোবেসেছে বিজয়নগরকে আর রাজাকে, হয়ত রাজকুমারীকেও। কিন্তু অর্জুনবর্মার কাছে রাজার বিশ্বাসের মূল্য অনেক। আবার রাজকুমারীর বোন মণিকঙ্কণা ভালোবেসেছে রাজাকে। রাজাও ভালোবেসেছে তাকে। কিন্তু রাজা দেবরায় পারেননা বিদ্যুন্মালা ছাড়া অন্য কাউকে গ্রহণ করতে। কলিঙ্গরাজ গজপতি ভানুদেবের সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক চুক্তি। ফলে এই চুক্তিতে রাজাও এখন বন্দি। বিদ্যুন্মালাও বন্দি। অর্জুনবর্মাও বন্দি। মণিকঙ্কণাও বন্দি। এর থেকে মুক্তির পথ কী? হৃদয়ের থেকে কি রাজনীতি বড়? রাজা দেবরায়ের বাগদত্তা বধূ বিদ্যুন্মালার পক্ষে কি পাওয়া সম্ভব অর্জুনবর্মাকে? মণিকঙ্কণাই কি পেতে পারেন নিজের বোনের ভাবী স্বামী রাজা দেবরায়কে। জানতে হলে এখুনি টিকিট কেটে ফেলুন অনলাইনে theatreroad.com থিয়েটার রোডে। নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে চলে আসুন নির্দিষ্ট প্রেক্ষাগৃহে।